শাহরুখের পাশে দাঁড়াবে কে?

লেখাটি শেয়ার করুন

Share on facebook
Share on linkedin
Share on twitter
Share on email

শাহরুখ খানের সঙ্গে সালমান শাহর একটা ছবি আছে। ছবিটার দিকে আজ একবার তাকানো যাক। শাহরুখের ব্র্যান্ডের দাম আজ আকাশছোঁয়া। বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী। পাঁচ হাজার কোটি টাকার মালিক। ছবিতে তাঁর পাশে দাঁড়ানো সালমান শাহ চলে গেছেন আজ ২৫ বছর। ছবির দিকে তাকিয়ে মনে উদয় হয় দুটো প্রশ্নের। কাকে বেশি আকর্ষণীয় লাগছে, নায়কোচিত? আজ যদি শাহরুখ বাংলাদেশে আসেন, তাঁর পাশে এভাবে দাঁড়িয়ে ছবি তুলবেন কে?

বাংলাদেশে বেড়াতে এসে শাহরুখ খানের দেখা হয় সালমান শাহর সঙ্গে

স্থিরচিত্রের কথা থাক। আসা যাক চলচ্চিত্রে, যেখানে সালমান শাহকে নড়তে–চড়তে দেখা যায়। যেখানে তাঁকে নাচতে–গাইতে, বাইক চালাতে বা শাবনূরের সঙ্গে দুষ্টুমি করতে দেখা যায়। সেখানে ভক্তরা কীভাবে পেয়েছেন সালমানকে? প্রেমের দৃশ্যগুলো যেন প্রেমেরও অধিক রোমান্টিক, কান্নার দৃশ্যগুলো চোখের জলের চেয়েও সত্য, অ্যাকশনগুলো এত সিনেম্যাটিক যে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’ সিনেমায় সালমানের নায়িকা ছিলেন শাবনূর। ছবির ‘সাথি তুমি আমার জীবনে’ গানে কালো রঙের পোশাকে সাদা একটা মোটরবাইকে তাঁদের ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় ঢাকার পথে। ঢাকা তখন টু স্ট্রোক বেবিট্যাক্সির শহর। সালমানদের গানটার দৃশ্যে ঢুকে পড়ে সেগুলো। সেই দৃশ্যেও সালমানকে বেমানান লাগেনি। মনে হয়েছে, সাদাকালো একটা আনস্মার্ট শহরের রঙিন যুবরাজ তিনি।

ঢালিউডের অনেককে বলতে শোনা যায়, সালমানের সময়টাই ছিল অন্য রকম। সালমান ঢালিউডের সেই যুবরাজ, যাঁর জন্য সবাই তাঁর সেরাটুকু নিয়ে হাজির হতেন। তাতে যুবরাজ হয়ে উঠতেন আরও আকর্ষণীয়, আরও মনকাড়া, আরও শক্তিশালী। চিত্রগ্রাহক তাঁর সর্বোচ্চটা দিয়ে ধারণ করে নিয়েছেন যুবরাজের শ্বাসপ্রশ্বাসের ছবিটুকু, ক্যামেরার পেছনে দাঁড়িয়ে নিপুণভাবে নির্দেশনা দিতেন সময়ের সেরা চলচ্চিত্রকার। সেরা সংগীত পরিচালক, গীতিকার, সুরকার করেছেন গান, হৃদয় উজাড় করে গেয়েছেন সেরা শিল্পীরা—যুবরাজের ঠোঁটে শোভা বাড়াতে। সালমানকে সাজাতেন যে রূপসজ্জাশিল্পী, যেন সালমান নয়, সত্যিকারের রাজপুত্রের সূক্ষ্মতম খুঁতটুকু ঢেকে তাঁকে করে তুলতেন চরিত্র। সালমানের পরিচালকদের বলতে শোনা যেত, কাঁদার জন্য সালমানের গ্লিসারিন লাগত না। আর হাসার জন্য? সালমান সব সময় প্রাণ খুলে হাসতেন।

Read more

কিন্তু সবখানে তাঁকে আগলে রাখা যায়নি। এত মানুষের চোখের মণি সালমানের অভিমানও ছিল পাহাড়সমান। এত অল্প বয়সে পাহাড়সমান খ্যাতি বাড়িয়ে দিয়েছিল তাঁর শত্রু। বন্ধু যে দু–একজন ছিলেন, তাঁদেরও ক্রমশ করে তোলা হচ্ছিল তাঁর প্রতিপক্ষ। খোদ স্ত্রী সামিরার হৃদয় বিষিয়ে তোলা হচ্ছিল দিনের পর দিন, সে কথাও আজ কারও অজানা নেই। নয়তো দিগ্‌বিজয়ী যুবরাজ কেন নিজ হাতে লিখে যাবেন নিজের আত্মহননবার্তা! কদিন বাদেই তাঁর যাওয়ার কথা ছিল নতুন রাজ্য দখলে। মুম্বাইয়ে বেড়াতে গেলে শাহরুখ নিজেই বলেছিলেন, ‘চলে এসো। একসঙ্গে কাজ করি।’ প্রত্যুত্তরে সালমানও বলেছিলেন, ‘আর কটা দিন যাক।’

সালমান নেই। গত ২৫ বছরে তিল তিল করে ঢালিউডের একেকটি বাতি নিভে যেতে দেখেছে মানুষ। বন্ধ হয়ে যেতে দেখেছে হল। সিনেমা নেই, গল্প নেই, হৃদয়কাড়া গান নেই। এমনকি অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আলোছড়ানো কোনো নায়কও নেই।

সালমানের নায়িকারা অবসরে চলে গেছেন সবাই। একবার সালমানের নায়িকা হলে আর কিছু যেন হতে নেই কারও। শাবনূর সিডনিতে, মৌসুমী গুলশানে, ঘরবন্দী লিমা, শ্যামা তো মরেই গেছেন। শাবনাজ পুরোদস্তুর সংসারী এক মা। সালমান চলে যাওয়ার পর সিনেমায় বেশি দিন তাঁকে আর দেখাই গেল না। বৃষ্টি, কাঞ্চি, শাহনাজদের কোনো খোঁজ জানে না কেউ। তবে তাঁদের সঙ্গে হাসি–কান্নার আড়াই ঘণ্টার সেলুলয়েড জীবন ভালোবেসে বুকে চেপে রেখেছে মানুষ। দিনের পর দিন তারা আশা নিয়ে বসে আছে, সালমানের একদিন পুনর্জন্ম হবে। ঢালিউডের রাজপুত্র ফিরে আসবেন আবার।

লেখাটি শেয়ার করুন

Share on facebook
Share on linkedin
Share on twitter
Share on email

আরও লেখা

ভেনিসে সেরা হল যারা

শেষ হল এ বছরের ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। গত ৩১ আগস্ট শুরু হয় পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো এ চলচ্চিত্র উৎসব। ৭৯তম এ উৎসবের

বিস্তারিত...

আলো ভাগাভাগি করে বাঁচি

যে কোন পরামর্শ, সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করুন