এক রেস্তোরাঁয় আড্ডা দিচ্ছিল বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী। হঠাৎ একটা তেলাপোকা উড়ে এসে বসল এক তরুণীর কাঁধে। যা হওয়ার তাই হলো। চিৎকার করে পুরো রেস্তোরাঁ মাথায় তুলল সে। পোকাটাকে কাঁধ থেকে ফেলে দেওয়ার জন্য অস্থিরভাবে দুই হাত ছুঁড়তে লাগল। টেবিলের অন্যদের ভেতরেও আতঙ্ক সংক্রমিত হলো। কুৎসিত পোকাটা যদি তাঁদের গায়েও বসে?
একপর্যায়ে পোকাটাকে তাড়ানো গেল। কিন্তু কাঁধ বদলে সেটা গিয়ে বসল অন্য একটি টেবিল ঘিরে বসা আরেক নারীর গায়ে। সেই টেবিলেও শুরু হলো চিৎকার। পুরো রেস্তোরাঁয় হইচই পড়ে গেল। ভদ্রমহিলাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন রেস্তোরাঁর একজন ওয়েটার। ততক্ষণে ভদ্রমহিলা তেলাপোকাটিকে ঝেরে ফেলেছেন। সেটি উড়ে গিয়ে বসল খোদ ওয়েটারের গায়ে। তরুণ স্মার্ট ওয়েটার কিন্তু টু শব্দটিও করলো না। দৃঢ়ভাবে চুপচাপ দাঁড়ালো। জামার ওপর হেঁটে বেড়ানো তেলাপোকার গতিবিধি লক্ষ্য করল এক মুহূর্ত। তারপর আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে সেটাকে আঙ্গুল দিয়ে ধরে রেস্তোরাঁর বাইরে ফেলে দিলো।
কফি খেতে খেতে পুরো ব্যাপারটা দেখে বেশ মজা পেলাম। আমার অ্যান্টেনায় দারুণ একটা ব্যাপার ধরা পড়ল। ভেবে অবাক হলাম, পুরো ঘটনাটির জন্য কি আসলে তেলাপোকাটা দায়ী? যদি তাই হবে, তাহলে ওয়েটার বিরক্ত হলো না, ভয় পেল না, চিৎকারও করল না। কেন? কোনও উচ্চ-বাচ্য ছাড়া নিপুনভাবে পরিস্থিতি সামলাল সে। তেলাপোকাটিকেও বাইরে ফেলে দিল!
আসলে পুরো ব্যাপারটার জন্য তেলাপোকা না, বরং পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে না-পারা ওই নারীরাই দায়ী। বুঝলাম, মা-বাবা, অফিসের বস্ কিংবা স্ত্রীর ওপর আমরা যে বিরক্ত হই— ব্যাপারটার জন্য আসলে তাঁরা দায়ী নন। বরং তাঁদেরকে মোকাবেলা করতে আমরাই ব্যর্থ হই।
ধরা যাক, পথের যানজট। যানজটে বসে আমরা অস্থির হয়ে পড়ি। কারণ, যানজট থেকে তৈরি ভোগান্তিকে আমরা সুষ্ঠুভাবে মোকাবেলা করতে পারি না। আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত নানান সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে আমি বুঝতে পারি, জীবনের নানা সমস্যায় অস্থির হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের উচিৎ দৃঢ়চিত্তে সমস্যাগুলির মুখোমুখি দাঁড়ানো, সেগুলোকে মোকাবেলা করা। তেলাপোকা গায়ে বসায় রেস্তোরার ওই নারী বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। আর ওয়েটার সমস্যার ডাকে সাড়া দিয়েছেন।
প্রতিক্রিয়া দেখানো মানুষের সহজাত স্বভাব। সমস্যার মোকাবেলা করা ইতিবাচক। জীবনকে বোঝার সুন্দরতম উপায় হচ্ছে একজন সুখি মানুষের দিকে তাকানো। কেউ সুখী, তার মানে এই নয় যে, তাঁর জীবনের সব কিছু ঠিকঠাক চলছে। তিনি সুখী, কারণ জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তিনি সঠিক আচরণটি করেন। প্রতিটি সমস্যায় তিনি ইতিবাচক সাড়া দেন।
[ একটি কলেজের সমাবর্তনে চমৎকার এ বক্তৃতাটি দেন গুগলের ততকালীন প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিসাই। সূত্র : ই-কনসাল্ট ইন্ডিয়া এটি প্রকাশ করে ২১ আগস্ট ২০১৫। আমি অনুবাদ করি ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫। তবে এটি যে সুন্দরের বক্তব্য, সে ব্যাপারে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই ]