মেঘ না চাইতেই একদিন বৃষ্টি নামলো মাইকি ম্যাডিসনের জীবনে। শন বেকারের ফোন পাওয়া তার জীবনে সেরকমই এক ঘটনা। যদিও সেটা সিনেমার প্রস্তাব নয়, ছিল কফির আমন্ত্রণ। পরের ঘটনা তো বিশ্ব জেনে গেছে।
বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছেন শন বেকার। যে সিনেমার জন্য তিনি পুরস্কার পেয়েছেন, সেই ‘আনোরা’ ছবির আনোরা চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাইকি ম্যাডিসন, নিউইয়র্কের একজন যৌনকর্মী। কী ঘটেছিল সেই কফিটেবিলে? মাইকি ম্যাডিসন বলেন, ‘কফি খেতে বসেছিলাম শন বেকার ও তার স্ত্রী সামান্থা কোয়াঁনের সঙ্গে। তারা আমাকে একটা চমৎকার গল্প শোনালেন। শুনে আমি বলে উঠলাম, দারুন! আমাকে কিন্তু তখন পর্যন্ত সিনেমাটায় অভিনয়ের প্রস্তাবও দেওয়া হয়নি। কিন্তু আমি এমন ভাব দেখালাম, যেন প্রস্তাব দেওয়ার আগেই আমি রাজি হয়ে গেছি।’

এসব ঘটনা শুটিং শুরু হওয়ার প্রায় বছরখানেক আগের। এর পরেই সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যায়। কিন্তু ম্যাডিসনের আগের করা যেকোনো চরিত্রের থেকে আনোরা একেবারেই ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘আমি ক্যালিফোর্নিয়ার মেয়ে, আর আমাকে অভিনয় করতে হবে নিউইয়র্ক সিটির একজন যৌনকর্মীর চরিত্রে। নিউইয়র্কের মানুষজন, বিশেষ করে ওই পেশার মেয়েদের চলন-বলন একদমই আলাদা। তাই আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হলো। আমি চলে গেলাম নিউইয়র্ক। সেখানকার যৌনকর্মীদের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করলাম। তাদের সঙ্গে কথা বলা, আড্ডা দেওয়া শুরু করলাম। এভাবে একসময় আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল। মনে হল, এখন আমি পারবো, চরিত্রটাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে।’
ম্যাডিসনকে দর্শকেরা আগেও দেখেছেন বেশ কিছু সিনেমায়। ‘বেটার থিংস’-এ তিনি কাজ করেছেন বছর সাত আগে। তারপর কোয়ান্টিন টারান্টিনোর বানানো ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন হলিউড’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারন করতে গিয়ে ম্যাডিসন বলেন, ‘খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম টারান্টিনো সাহেব কীভাবে একটা গল্পকে ভেঙে চুরমার করে নতুন গল্প তৈরি করেন। আমার বয়স তখন মাত্র উনিশ! ইস, কি ভয়ানক সময়টাই না গেছে আমার। কি রোমাঞ্চকর সময়, কি ভীষণ উত্তেজনা! সিনেমাটা শেষ করার পর কাউকে বলতেও পারছিলাম না, পরিচালকের কড়া নির্দেশ, মুখ বন্ধ রাখতে হবে। যেন একদল মানুষ গোপন কোন মিশন শেষ করে অপেক্ষা করছি। এত বড় একজন নির্মাতার সঙ্গে কাজ করেছি ভেবে আমি খুবই রোমাঞ্চিত ছিলাম। কিন্তু এরপর আমার কী হবে?’
এরপর মাইকি ম্যাডিসনের জীবনে যা ঘটে গেল, তা তো সবারই জানা। প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। কান উৎসবের সবচেয়ে বড় পুরস্কারটা নিয়ে গেছেন তার পরিচালক। কিন্তু সিনেমার সেই চরিত্রটিকে জীবন্ত করেছেন ম্যাডিসন। ‘আনোরা’র পর নাটালিয়া পোর্টম্যানের সঙ্গে ‘লেডি ইন দ্য লেক’ মিনিসিরিজে তাকে দেখতে পাবেন দর্শকেরা।



