লোকে বলে, পরীমনির কাঁধে জিন আছে!
লোকে তো কত কিছুই বলে। রহস্যময় এই রূপবতীকে নিয়ে লোকে অনেক কিছু ভাবে। সুদূরতমাকে দূর থেকে নানা রঙে আঁকতে ভালোবাসে। আর পরী তো সিনেমার নায়িকা। যতবার তিনি কাঁদবেন, ততবার বুক ভাসাবেন অনুরাগীরা, এই তো হওয়ার কথা ছিল। এত গ্ল্যামার ঢালিউড কি আর পাবে?
পরীর ছবি জুম করে দেখতে হয় না। ইনস্টাগ্রামে স্ক্রল করতে করতে খেই হারাতে হয় না। মনে হয় এক অদ্ভুত পরী-ভ্রমণ। শাড়ি থেকে শর্টস্কার্ট, বিকিনি থেকে হিজাব, কোনো অবয়বেই তাঁকে এতটুকু মন্দ লাগে না। পিরোজপুরের মেয়েটি ঢাকায় আসে, বেণির বিনুনিতে তাঁর লেগে থাকে বলেশ্বর নদের হাওয়া। যেন বদর পীরের আশীর্বাদে তাঁর সাদা-কালো জীবনটা রঙিন হয়ে ওঠে। লোকে এখন বলে, সে তো পরী, বহু জিনের ঘাড় মটকে দিন কাটে তাঁর।
এই হাসি, এই কান্না। মন চাইলে নাচ করছেন, আকাশ কালো হলেই গান। তাঁকে নিয়ে কত কথা, লাইক-শেয়ারের অন্ত নেই। তাঁকে কি আর সিনেমা করতে হয়? ট্রেডমিলে দৌড়ে ঘেমে-নেয়ে বিশ্রাম নেন পুরোনো দিনের কাঠের দোলনায়। বিরাট এক ফটোফ্রেম থেকে তাঁকে সঙ্গ দেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই তো কদিন আগের কথা। ধবধবে সাদা গাড়িটা সড়কদ্বীপে লেগে দুমড়ে গেল ভোররাতে। সন্ধ্যায় তাঁর বনানীর বাসায় চলে এল সাড়ে তিন কোটি টাকার কুচকুচে পলিশের নতুন গাড়ি। জাদুটাদু জানে নাকি মেয়েটা? জানতেও পারে!
ঈদ মানেই আনন্দ, সালামি। পরীমনি ঈদের দিন সালাম দিলেই মোটা অঙ্কের সালামি চলে আসে। তবে টাকার মতো ময়লা জিনিস, যাতে ভাইরাস লেগে থাকে, বেশিক্ষণ হাতে রাখেন না পরী। সারা বছর রাখেন না, ঈদের সময় আরও রাখেন না। ঈদ এলে তাঁর জন্য অপেক্ষা করে অনেক মানুষ। ঢালিউডের প্রাণকেন্দ্র এফডিসির বহু সহশিল্পী যখন অর্থকষ্টে থাকেন, তখন পরী তাঁদের জন্য কোরবানির আয়োজন করেন। এ বছরও তাঁদের জন্য পাঁচটি গরু প্রস্তুত আছে। আর ঘরে? ঈদের দিন নিজ হাতে রান্নাও করেন পরী। চিনি দিয়ে মিষ্টি মিষ্টি করে মাংস, সেমাই, পায়েস।
পরী কেবল রাঁধেন না, কাঁদেনও। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বিমানবন্দরে একবার ভেউ ভেউ করে কেঁদে ফেলেছিলেন। কর্মকর্তারা হতবাক! একটা ফুটবলের জন্য এভাবে কেউ কাঁদে? কাঁদবেন না? বিশ্বকাপের বল নিয়ে কলকাতা থেকে ফেরার পথে সেটা বিমানে তুলতে দেবে না। শেষমেশ বাতাস বের করে চ্যাপ্টা বলটি বাংলাদেশে এল পরীর সঙ্গে।
মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের শেষ আসরের কথা। সব পুরস্কার দেওয়া শেষ, পরীর নাম নেই! তিনি কেঁদে একশা। তখনই ঘোষণা এল, বিশেষ সমালোচক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। চোখ মুছতে মুছতে মঞ্চে উঠলেন। অগ্রজ অভিনেত্রী কবরীর হাত থেকে পুরস্কার নিলেন ভেজা চোখে। কবরী বললেন, ‘পরীদের কাঁদতে নেই।’ কাঁদো কাঁদো স্বরে পরী বললেন, ‘আমি তো ডানাকাটা পরী।’
পরীমনির ‘ডানাকাটা পরী’ আইটেম গানটি ভাইরাল হয়েছিল। এ ছাড়া ‘আরও ভালোবাসব তোমায়’, ‘পুড়ে যায় মন’, ‘রক্ত’, ‘ধূমকেতু’, ‘কত স্বপ্ন কত আশা’সহ তাঁর কোনো ছবিই তেমন সাড়া ফেলেনি। সিনেমার বদলে তিনি আলোচিত হয়েছেন বেপরোয়া জীবনযাপনের কারণে। মনের কথা মেনে চলেন বলেই সবাই বলে, পরী বেপরোয়া। মন সায় না দিলে দেওয়া কথাও ফিরিয়ে নেন, মন চাইলে চলে যান যখন যেখানে খুশি। তবে একজন চৌকস পরিচালকের হাতের পুতুল হলে পরীকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। তার প্রমাণ ‘স্বপ্নজাল’ সিনেমাটি। ঢালিউডের পরী সেখানে হয়ে গিয়েছিলেন শুভ্রা। কী শুভ্র আর পরিচ্ছন্ন অভিনয়! পরীকে বশ করার মন্ত্র কি আর সবাই জানতে পায়?
পরীর প্রেম-প্রণয়ের গল্প রূপকথার মতো। বহু তরুণের দাবি, পরী তাঁর প্রেমিকা ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কেবল পুরান ঢাকার এক যুবককেই প্রেমিক বলে স্বীকার করেছিলেন পরী। চোখের জলে ভেসে গেল সেই প্রেম। একদিন জানা গেল, তিন টাকা দেনমোহরে বিয়ে করে ফেলেছেন ঢালিউডের পরী। কিন্তু কোথায় সেই বর, কোথায় তাঁদের সংসার, কেউ জানে না। ঢালিউডের কোনো নায়িকাকে নিয়ে এত রহস্য থাকতে শুনেছে কেউ?