‘দেবী’ ঢুকে পড়ুক ঢালিউডের শরীরে

লেখাটি শেয়ার করুন

Share on facebook
Share on linkedin
Share on twitter
Share on email

মানুষের মধ্যে ‘দেবী’ দেখতে হবে, এ রকম একটা তাগিদ ছিল। একটা পক্ষের ছিল শঙ্কা, ‘বেশি বেশি প্রচারণা হয়ে যাচ্ছে।’ তাঁরা ভাবছিলেন, ‘নতুন পরিচালক, কি–না–কি বানায়!’ তবে যাঁরা ইতিমধ্যে ‘দেবী’ সিনেমাটি দেখে এসেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই একমত হবেন যে এত প্রচার আর ঢাকঢোল পেটানোর উদ্দেশ্য একটাই—দর্শকদের জানানো যে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখে আসুন, চাইলেই ভালো বাংলা ছবি বানানো যায়।

১৯ অক্টোবর দেশের ৩২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে অনম বিশ্বাস পরিচালিত ছবি ‘দেবী’। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকারি অনুদান পায় ছবিটি। আর সরকারি অনুদান পাওয়া এটিই সম্ভবত প্রথম ছবি, যার জন্য দর্শকমহলে উৎসাহের কোনো সীমা নেই। কারণ অনেকগুলো। প্রধানত এবং প্রথমত, এটি হ‌ুমায়ূন আহমেদের গল্প থেকে নির্মিত, দ্বিতীয়ত, এতে অভিনয় করেছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। এ ছাড়া ছবিটির অন্যতম প্রযোজক তিনি। নবাগত একজন পরিচালকের ছবির দায়িত্ব দুই কাঁধে তুলে নিয়েছেন একজন অভিনেত্রী—এটিই কিন্তু উৎসাহের সব থেকে বড় বিষয়।

দেবী-দর্শন
হ‌ুমায়ূন আহমেদের ‘মিসির আলি’ সিরিজের একটি উপন্যাস থেকে নির্মিত হয়েছে ‘দেবী’। উপন্যাসে রানু নামের বিবাহিত এক তরুণীর দৃষ্টি ও শ্রুতি বিভ্রম রহস্যের সমাধানে কাজ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের খণ্ডকালীন শিক্ষক মিসির আলি। হ‌ুমায়ূন পাঠকের কাছে এ গল্প পুরোনো। চলচ্চিত্রের ভাষায় বড় পর্দায় একে তুলে ধরাটাই ছিল পরিচালকের জন্য একটি কঠিন কাজ।

‘দেবী’ ছবির দৃশ্যায়ন, আবহসংগীত, সংলাপ, অভিনয় চমৎকার। রানুর ঘর, ব্যালকনি, বারান্দায় জবা ফুলের গাছ ছবিতে ভৌতিক আবহ ছড়িয়েছে। মিসির আলির অবিন্যস্ত চুল ও বাসা, দুই পায়ের দুই পাটি স্যান্ডেল, গলায় ঝোলানো নকিয়া ১১০০ ফোন রস জুগিয়েছে। রানুর অসহায় স্বামী আনিসের সারল্য ও স্ত্রীকে নিয়ে দুশ্চিন্তা নারী দর্শকদের প্রশান্তি দিয়েছে। আর আপাত নির্বোধ চেহারা থেকে নৃশংস হয়ে ওঠা ইরেশ যাকের দর্শকমনে ঘৃণা তৈরি করতে পেরেছেন। এ সবকিছুর সম্মিলন ঘটাতে পেরেছেন বলেই বলা যায়, নবাগত এই পরিচালক সফল। প্রথম ছবি দিয়েই দর্শককে তিনি জিতে নিয়েছেন।

‘দেবী’ টান টান উত্তেজনার ছবি। বিরতির সময়টুকুসহ হিসাব করলে মনে হয়, এই তো খানিকক্ষণ আগে হলে ঢুকেছিলাম। অর্থাৎ একটু অতৃপ্তি থেকেই যায়। মনে হয়, আর একটু হলে ভালো হতো। হুমায়ূন আহমেদের গল্পের মতো আকস্মিকভাবে শেষ হয়ে গেছে ছবিটাও। অথচ এতে মাত্র একটি গান। ছবি মুক্তির আগেই ইউটিউবে মুক্তি পায় অনুপম রায়ের কণ্ঠে ‘দুমুঠো বিকেল’ গানটি। ছবিতে সেটি অন্য রকম এক আভা ছড়িয়েছে। তবে মমতাজের গাওয়া ‘দোয়েল পাখি কন্যারে’ গানটি না থাকার অভাবও অনুভব করেছেন অনেক দর্শক। ছবিজুড়েই মূল চরিত্র রানুর পরনে ছিল বাঙালি নারীর প্রিয় পোশাক শাড়ি। সিনেমার মেজাজের সঙ্গে সংগতি রেখেই যেন নির্ধারণ করা হয়েছিল শাড়িগুলোর রং। এক নারী দর্শককে বলতে শোনা যায়, শাড়িগুলো কোত্থেকে কিনেছে কে জানে!

গল্পের সঙ্গে যোগ রেখে ‘দেবী’কে করে তোলা হয়েছে আধা ভৌতিক। শব্দ ও আবহসংগীত চমকে দিয়েছে দর্শকদের। ক্ষণিকের জন্য ভয়ও পাইয়ে দিয়েছে। তা ছাড়া রানু ও আনিসের দাম্পত্য বোঝাপড়া রোমান্টিক এক অনুভূতি জাগিয়েছে দর্শকদের। মিসির আলি চরিত্রে মিশে গিয়েছিলেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। তাঁর গাম্ভীর্য, নীরবতা, অমনোযোগিতা তাঁকে করে তুলেছিল বিশ্বাসযোগ্য। তবে যখনই রসিকতা করছিলেন, মনে হচ্ছিল এ যেন ‘আয়নাবাজি’ ছবির আয়না।

‘দেবী’ ছবির সব থেকে আশা জাগানো দিকটি হচ্ছে, এটি পরিচালকের প্রথম ছবি, প্রযোজকের প্রথম প্রযোজনা। গুরুত্বপূর্ণ দুটি দায়িত্বে দুই নবাগত মিলে যে চমৎকার নির্মাণ করলেন, একে সাধুবাদ জানাতে হয় টুপি খুলে, আলতো ঝুঁকে।

প্রত্যাশা
‘দেবী’ ছবিতে পোড়ো মন্দিরের এক দেবীমূর্তি প্রবেশ করে রানুর শরীরে। বিপদে তাঁকে রক্ষা করে সেই দেবী। এই ছবির মধ্য দিয়ে ঢালিউডের শরীরে দেবী প্রবেশ করুক। ঢালিউডকে সুরক্ষিত রাখুক। এ রকম পরিচ্ছন্ন, নিটোল বিনোদনের ছবি নির্মিত হোক। বাংলা চলচ্চিত্র শুরুতে বাংলাদেশে এবং পরে সারা পৃথিবীতে ব্যবসাসফল হোক, প্রশংসা কুড়োক।

দেবী
পরিচালনা: অনম বিশ্বাস
কাহিনি: হ‌ুমায়ূন আহমেদ
চিত্রনাট্য ও সংলাপ: অনম বিশ্বাস
অভিনয়: জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, অনিমেষ আইচ, শবনম ফারিয়া, ইরেশ যাকের প্রমুখ
প্রযোজনা: জয়া আহসান
পরিবেশনা: জাজ মাল্টিমিডিয়া

লেখাটি শেয়ার করুন

Share on facebook
Share on linkedin
Share on twitter
Share on email

আরও লেখা

আলো ভাগাভাগি করে বাঁচি

যে কোন পরামর্শ, সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করুন